বিশেষ প্রতিবেদক : স্বাধীনতার পর চারদফা সরকারে থাকলেও একাত্তরের ২৫ মার্চ গণহত্যার আন্তর্জাতিক স্বীকৃতি আদায়ে আওয়ামী লীগ ব্যর্থ হয়েছে বলে দাবি করেছে বিএনপি। গতকাল রবিবার দুপুরে রাজধানীতে এক আলোচনা সভায় দলটির স্থায়ী কমিটির সদস্য ড. খন্দকার মোশাররফ হোসেন এ দাবি করেন।
জাতীয় প্রেস ক্লাবের কনফারেন্স লাউঞ্জে মহান স্বাধীনতা ও জাতীয় দিবস উপলক্ষে এ আলোচনা সভার আয়োজন করে স্বাধীনতা ফোরাম। আয়োজক সংগঠনের সভাপতি আবু নাসের মুহাম্মদ রহমাতুল্লাহর সভাপতিত্বে এতে বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান বরকত উল্লাহ বুলু, চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা আবুল খায়ের ভুঁইয়া, এলডিপির যুগ্ম মহাসচিব সাহাদাত হোসেন সেলিম, বিএনপির প্রশিক্ষন বিষয়ক সম্পাদক এবিএম মোশাররফ হোসেন, নির্বাহী কমিটির সদস্য নিপুণ রায় চৌধুরী, জাসাস সহসভাপতি শাহিনুল ইসলাম শায়লা প্রমূখ বক্তব্য রাখেন।
ড. খন্দকার মোশাররফ হোসেন বলেন, ১৯৭১ সালের ২৫ এর কালো রাত্রিতে বাংলাদেশে পশ্চিম পাকিস্তানিরা যে হত্যাযজ্ঞ চালিয়েছিলো, দুঃখের বিষয় যে, আজকে যারা ক্ষমতায়, যারা নিজেদের মুক্তিযুদ্ধের ঠিকাদার মনে করেন, দাবি করেন তারা এই ৪৭ বছরে বেশ কয়েকবার ক্ষমতায় এসেছেন কিন্তু ২৫ শে মার্চের কালো রাত্রিতে জেনোসাইডের আন্তর্জাতিক স্বীকৃতি তারা আদায় করতে পারেন নাই। জার্মানির গবেষণা সংস্থার জরিপের প্রসঙ্গ টেনে তিনি বলেন, ২৫ মার্চের গণহত্যার আন্তর্জাতিক স্বীকৃতি আদায় করতে ব্যর্থ হলেও আওয়ামী লীগ সরকার বাংলাদেশের জন্য লজ্জ্বাকর একটি স্বীকৃতি পেয়েছেন। সেটা হচ্ছে পৃথিবীর পাঁচটি স্বৈরাচারী দেশের মধ্যে বাংলাদেশ একটি। আমরা লজ্জ্বিত, আমরা ক্ষুব্ধ। আমরা বলতে চাই, এই সরকার গায়ের জোরের সরকার। সাবেক প্রধান বিচারপতিকে যেভাবে আপনারা (সরকার) বিদায় করে দিয়েছেন, বর্তমানে যেভাবে বিচার বিভাগ নিয়ন্ত্রণ করছেন। একটি রাষ্ট্রের তিনটি স্তম্ভকে যারা ধবংস করে দেয়, যারা গণতন্ত্রকে বাক্সবন্দি করে রাখে, কথা বলার অধিকার থাকেন না, সমাবেশ করার অধিকার থাকে না- সেই দেশের সরকারের নাম অবশ্যই স্বৈরাচারি হবে। সোহরাওয়ার্দি উদ্যানে বিএনপিকে জনসভার করতে না দেয়ার সমালোচনা করে তিনি বলেন,গণতন্ত্র হত্যা দিবসের দিন পতিত স্বৈরাচারকে সোহরাওয়ার্দি উদ্যানে সমাবেশ করতে দেয়া হলো। অথচ আমরা সমাবেশ করতে একাধিবার আবেদন করেও অনুমতি মেলেনি। কারণ সরকার জনগনকে ভয় পায় বলে আমাদেরকে সোহরাওয়ার্দি উদ্যানে সমাবেশ করতে দেয় না। তিনি প্রশ্ন করেন এটা কী কোনো গণতন্ত্রের সংজ্ঞার মধ্যে পড়ে। তিনি বলেন, ২০১৪ সালের ৫ জানুয়ারির পর থেকে আমরা বলে আসছি, এই সরকার গায়ের জোরের সরকার, অবৈধ সরকার । এই গায়ের জোরের সরকারই হচ্ছে স্বৈরাচার সরকার। ক্ষমতাসীনদের একতরফা নির্বাচনী প্রচারনাকেও স্বৈরাচারী বলে মন্তব্য করেন তিনি। নির্বাচনের আগে সরকার প্রধানের পদত্যাগের নজির দেশেই আছে বলে ওবায়দুল কাদেরকে স্মরণ করিয়ে দিয়ে বিএনপি সরকারের সাবেক এ মন্ত্রী বলেন, আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের বলেছেন, পৃথিবী কোথাও নির্বাচনের পূর্বে প্রধানমন্ত্রী বা সরকার প্রধানের পদত্যাগের নজির নাই। আমি বলতে চাই, পৃথিবীতে অনেক নজির আছে সেগুলো আনতে চাই না। শুধু বাংলাদেশের নজিরের কথা বলতে চাই। উনাদের বর্তমান সাথী এককালীন স্বৈরাচার এরশাদ প্রেসিডেন্ট ছিলেন, সরকার প্রধান ছিলেন। তিনি পদত্যাগ করেছেন গণঅভ্যুত্থানের মধ্যেই। এরপর বিচারপতি সাহাবুদ্দিন আহম্মেদের অধীনে নির্বাচন হয়েছিলো। আরেকটি নজিরের কথা বলছি। আমাদের নেত্রী ১৯৯৬ সালে তত্ত্বাবধায়ক সরকার প্রবর্তন করে প্রধানমন্ত্রী থেকে পদত্যাগ করেছিলেন। এরপর সেই নিরপেক্ষ সরকারের অধীনে নির্বাচন হয়েছিলো যেই নির্বাচনে শেখ হাসিনা ক্ষমতা এসেছিলেন। ক্ষমতায় থেকে আবার শেখ হাসিনা পদত্যাগ করেছিলেন এবং নির্দলীয় নিরপেক্ষ সরকার এসেছিলো তার অধীনে নির্বাচন হয়েছে। ওবায়দুল কাদের সাহেব আপনি যা বলছেন এটা ঠিক নয়। বরং সংসদীয় গণতান্ত্রিক দেশে একটি সংসদ রেখে আরেক সংসদ নির্বাচনের নজির কোথাও নেই। নিরপেক্ষ সরকারের অধীনে আগামী নির্বাচন অনুষ্ঠানের দাবি পুনর্ব্যক্ত করে তিনি বলেন,সরকার আগামীতে যে ধরণের নির্বাচনের পরিকল্পনা করছে সেই নির্বাচন এদেশে হবে না, হতে দেয়া হবে না। আমরা খালেদা জিয়ার মুক্তির দাবির সঙ্গে নির্দলীয় নিরপেক্ষ সরকারের অধীনে সকলের অংশগ্রহনের নির্বাচন, নির্বাচনের আগে সংসদ ভেঙে দেয়া এবং সেনাবাহিনীকে কিছুদিনের জন্য মোতায়েন করার দাবি ও আমাদের অব্যাহত থাকবে।
Leave a Reply